মহানবী হযরত মুহাম্মদ সঃ এর জীবনী সম্পর্কে জানুন
সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ইহকালে যারা তার পথ দেখানো অনুযায়ী চলবে, পরকালে তারাই জান্নাত পাবে। আমরা সবাই তাঁর উম্মত। প্রতিটি মুসলিমের হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু সাল্লাম এর জীবনী সম্পর্কে জানা দরকার। প্রতিটি মুসলিমের চির বিশ্বাস যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁর সুপারিশ ছাড়া একটা মুসলিম ও জান্নাতে যেতে পারবে না।
জন্ম
শৈশব ও কৈশোর কাল
নবুয়ত প্রাপ্তি
মক্কা জীবন
মক্কার কাফেরদের বিরুদ্ধে সম্মুখীন
মদিনায় হিজরত
মিরাজ গমন
মদিনার জীবন
হুদাইবিয়ার সন্ধি
বিদায় হজের ভাষণ
শেষ কথা
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল্লাহ। ও মাতার নাম আমিনা। তার জন্মের পূর্বেই তার পিতা মৃত্যু বরণ করেন। ছয় বছর বয়সে তার মা আমিনা মৃত্যুবরণ করেন।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের এক পুরো বিশ্বের নবী ও রাসুল ছিলেন। তার শৈশব ও কৈশোর কাল থেকেই সমাজের ও মানুষের বিভিন্ন দুঃখ কষ্ট নিয়ে চিন্তা করতেন। এই চিন্তাধারাই তাকে পরবর্তীতে মহামানব হতে সাহায্য করেছিল। তিনি ছিলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা। তার জীবন দশায় তিনি কোনদিন মিথ্যা কথা বলেননি।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাম ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন। তিনি বেশিরভাগই সময় হেরা গুহায় ব্যয় করতেন। এখানেই তাকে নবুয়তের তাজ পড়ানো হয়। হযরত মুহাম্মদ সাঃ হেরা গুহায় প্রথম পাঁচ আয়াত অবর্ত্নিত হয়। ঐতিহাসিকদের মতে তিনি নবুওয়াত দান করা হয়েছে রবিবার। কিন্তু মাসের ব্যাপারে ঐতিহাসিক দের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। ইবনে আব্দুল বা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে ৮ রবিউল আউয়াল তাকে নবুওয়াতের তাজ করানো হয়। অনুযায়ী নগদ প্রাপ্তি সময় বয়স ছিল ৪০ বছর। কিন্তু ইবনে ইসহাকের মতে সূত্রই রমজান নবুওয়াত দানে ভূষিত করা হয়। এ মত অনুযায়ী তার বয়স ছিল 40 বছর 6 মাস।
নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাই সালাম নবুওয়াত পাওয়ার পর প্রকাশ্যে মক্কা নগরীতে ইসলাম প্রচার শুরু করে। আরবদের মাঝে ইসলাম প্রচারের করা তথ্য ইসলামের প্রতিষ্ঠা করা মোটেও সহজ ছিল না। ওই সময় আরবের বিধর্মীরা ছিল প্রভাবশালী। তারা বিভিন্ন দেবদেবীর ও মূর্তির পূজায় লিপ্ত ছিল। তাদের চিরচারিত এ বিশ্বাস ভিত ভেঙ্গে দিয়ে ইসলাম গ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করেন। প্রথমে তার আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব এর মাঝে ইসলাম প্রচার কাজ শুরু করেন। সর্বপ্রথম তার স্ত্রী খাদিজা রহমাতুল্লাহ আলাইহিস সালাম কে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে আহ্বান জানান। পরবর্তীতে তিনি দলে দলে সকল মক্কা নগরীর মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেন। কিন্তু কেউ তার দাওয়াত কবুল করেন নাই। পরবর্তীতে হযরত আবু বক্কর রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহু তার ইসলামের দাওয়াত কবুল করেন। এ পর্যায়ে দলে দলে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাম এর শত্রু বাড়তে থাকে ইসলাম প্রচার করার কারণে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাম এর বিরুদ্ধে চরম শত্রু ছিল তার চাচা আবু জেহেল ও ওমর।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সঃ প্রচারের সূচনা করেন মক্কা নগরী। ইসলামের বিরুদ্ধে কোরাইশরা ও কাফিরা ষড়যন্ত্র শুরু করে। নবী-রাসূলদের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্ব প্রধান কাজ হল দ্বীনের দাওয়াত। আর তাই দাওয়াত মুমিনদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিশন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু সাল্লাম সত্য প্রচারে অদৃশ্য হলেন হে আমার প্রিয় রাসুল আপনার প্রভু আপনাকে যে সত্য দান করেছেন তা প্রচার করুন। তখন রাসুল সাঃ সত্য প্রচার করেন। ইসলাম হল সাম্য বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ ও একত্ববাদী। ধর্ম। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু সাল্লাম এর এ সত্য সুন্দরের আহ্বান কুসংস্কারছন্ন কায়েমি স্বার্থবাদী কুরাইশ মেনে নিতে পারল না তখন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে কুরাইশরা। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মক্কা জীবনে কাফেরদের সাথে ইসলামী দাওয়াত প্রচারে অনেক কষ্ট করেছেন। মোহাম্মদ সাঃ আরবের তাওহীদের দাওয়াত দেওয়ার সাথে সাথে সমাজে বিরাজএত অত্যাচার অনাচার অবিচার দুর্নীতি মদ পান জুয়া খেলা ইত্যাদি পাপাচারের বিরুদ্ধে কথা বলেন।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ মানবতার মুক্তির দূত হিসাবে কাজ করেন। ইসলাম ধর্মে লাইলাতুল মিরাজ যা শবে মিরাজ নামে পরিচিত। নবী করীম সাঃ ঐশ্বরিক উপায়ে উর্দু আকাশে আহরণ করেছিলেন এবং মহান রব্বুল আলামিন এর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। আল্লাহ তাআলার নির্দেশে নবী। মোহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাম মিরাজে গমন করেন। মেরাজ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো সিঁড়ি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় এর অর্থ উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন আধ্যাত্মিক পূর্ণতা বা উর্ধ্বলোকে গমন বিশেষত আল্লাহর নৈকট্য লাভ। মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত রাসূলের ভ্রমণ এবং মেরাজের ঘটনা ২৭ রোজা রাতে সংঘটিত হয়েছিল। পবিত্র কুরআন মাজিদের সূরা বানী ইসরাইলের এক নং আয়াতে সূরা নাজম এর এক থেকে ১৮ নং আয়াতে এবং সূরা তাকভিরের ১৯ নং থেকে ২৪ নং ১ গুলোর মিরাজের ঘটনা উল্লেখ করা আছে। পবিত্র মিরাজের রাতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ তার উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জান্নাতের চাবি হিসেবে নিয়ে আসেন যা প্রত্যেক মানুষের জন্য ফরজ।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সঃ মদিনার নগরবাসী এবং কুরাইশ গোত্রের মধ্যে সম্পাদিত একটি ঐতিহাসিক সন্ধি হল হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। এই সন্ধি চুক্তিটি ১০ বছরের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই সন্ধিটি করেন। বিশ্বের ইতিহাসে ইসলামে হুদাইভিয়া সন্ধি একটি যুগান্তকারী ঘটনা। পবিত্র জিলকদ মাসে মক্কার সীমানার মধ্যে যুদ্ধবিদ্য হারাম বলে নিষেধ ছিল। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর দীর্ঘ ছয় বছর নিজ জন্মভূমি না দেখার মাঝে মক্কায় যাওয়ার আগ্রহ ছিল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সালামের। ঠিক তখন ১৪০০ জন সাহাবী নিয়ে ৭০ টিউটের কাফেলা সহকারে মক্কার অভিমুখে রওনা হন। অপরদিকে আবুজেহেলের নেতৃত্বে ২০০ আরোহী সেনা সদস্য নিয়ে মদিনার দিকে রওনা হন। এমত অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গতিপথে পরিবর্তন করে মক্কা শহরের ৯ মাইল দক্ষিনে হুদাইবিয়ার নামক স্থানে ঘাঁটি স্থাপন করলেন। এখানে এসে মোহাম্মদ সাঃ কাফিরদের সাথে যে চুক্তি করেছেন তাই হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ আরবি দশম হিজরী সনে বিদায় হজ পালন করেন। দশম হিজরিৎ চিলহজ মাসের ৯ তারিখ আরাফার ময়দানে একলা পঞ্চাশ হাজার সাহাবী এর সামনে নবী সাল্লাম যে বক্তব্য পেশ করেছেন তাকে ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ নামে পরিচিত। তা নিম্নে দেওয়া হলোঃ