এইডস রোগ কেন হয় - এইডস রোগের লক্ষণগুলো কি কি

এইডস রোগ কেন হয়? এর কারণ আমরা অনেকেই জানি আবার অনেকেই জানিনা। এইডস রোগ খুবই মারাত্মক একটি রোগ। তাই আমাদের সকলের উচিত এইডস রোগ কেন হয়? এর কারণ সম্পর্কে জানা। তাই স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক বিষয় নিয়ে এই আর্টিকেলে এইডস রোগ কেন হয়? সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট এইডস রোগ কেন হয়? এর কারণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। উক্ত বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ এইডস রোগ কেন হয় - এইডস রোগের লক্ষণগুলো কি কি

এইডস রোগ কেন হয়

এইডস একটি মরণব্যাধি রোগ। এইচআইভি ভাইরাসের কারণে এইডস রোগ হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অনেক দেশ এইচআইভি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোতে এই ভাইরাস ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। আমরা অনেকেই এইডস রোগ কেন হয়? এর কারণ সম্পর্কে জানিনা। যেহেতু এই রোগ মরণব্যাধি তাই এইডস রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা ১০ সরকারি পলিটেকনিক ২০২৩

এইডস রোগ কেন হয় এর কারণঃ

১। ছেলে অথবা মেয়ে যে কোন একজন যদি এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয় এবং যৌন মিলন করে তাহলে যৌন মিলনের কারণে উভয়েরই এইডস রোগ হয়ে থাকে। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলন করলে এইডস রোগ হয়ে থাকে।

২। অনেক ক্ষেত্রে ইনজেকশন নেওয়ার পরে একই ইনজেকশন অনেকের শরীরে করা হয়। একই ইনজেকশন প্রতিবার ভিন্ন মানুষের শরীরে করার ফলে এইডস রোগ হয়ে থাকে।

৩। যদি কোন এইডস আক্রান্ত রোগীর শরীরে সুচ ফোটানো থাকে এবং একই সুচ অন্য কারো শরীরে ফোড়ানো হয় তাহলে এইডস রোগ সংক্রমিত হতে পারে।

৪। বীর্য অথবা রক্তের মাধ্যমে যদি এইচআইভি ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় যার ফলে এইডস রোগ হয়ে থাকে।

৫। যদি অরক্ষিত মিলন অর্থাৎ শারীরিক সম্পর্ক করার সময় কোন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুসরণ করা না হয় তাহলে অনেক সময় এইডস রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

৬। যদি অনিরাপদ রক্ত শরীরে সঞ্চালিত হয় তাহলে এইচআইভি ভাইরাস সহজেই রক্তের সাথে শরীরে প্রবেশ করে যার ফলে এইডস রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

এইডস রোগের লক্ষণগুলো কি কি

আমরা যদি এইডস রোগের লক্ষণগুলো কি কি? তা জেনে নিতে পারি তাহলে খুব সহজেই এই মরণব্যাধি রোগটি নির্ণয় করতে পারব। যেহেতু এটি বাংলাদেশের ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে তাই এইডস রোগের লক্ষণগুলো কি কি? এ সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই ধারণা রাখতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো অনেক পরে প্রকাশ পায়। এইডস রোগ প্রকাশ পেতে প্রায় ১০ বছর মত সময় লাগে।

১। ঘন ঘন জ্বর হওয়া এবং জ্বর এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত একটানা স্থায়ী থাকা।

২। ঘন ঘন জ্বর হওয়া এর সাথে গলা অস্বাভাবিক ব্যথা করা। খাবার খাওয়ার সময় সেগুলো গিলতে অনেক সমস্যা হওয়া।

৩। ঘুমের মধ্যে ঘাম হওয়া। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুকনো কাশি হওয়ার মত সমস্যা দেখা যায়।

৪। অল্পতেই বমি বমি ভাব হওয়া অনেক সময় বমি হওয়া। পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেওয়া।

৫। ক্লান্তি হওয়া এবং মাথাব্যথা করা। একটুতেই শরীর অতিরিক্ত পরিমাণে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া। সব সময় অলসতা বোধ করা। একটু হাঁটলেই শ্বাসকষ্ট অনুভূত হওয়া।

৬। লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া। লসিকা গ্রন্থি হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অংশ যা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের হাত থেকে রক্তকে রক্ষা করে।

৭। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথা করা এবং ত্বকে ফুসকুড়ি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এই ফুসকুড়ি গুলো চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দেয়।

এইডস রোগের উপসর্গ গুলো কি

এইচআইভি এক ধরনের ভাইরাস যার কারণে এইডস রোগ হয়ে থাকে। আমরা ইতিমধ্যেই এইডস রোগ কেন হয়? তা জেনেছি। এইডস মরণব্যাধি রোগ নির্ণয় করার জন্য এইডস রোগের উপসর্গ গুলো কি? এ সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে। যদিও এর উপসর্গগুলো অনেক পরে প্রকাশ পায় তবুও এইডস রোগের উপসর্গ গুলো কি? তা জেনে নেওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

  • ক্লান্তি ভাব
  • মাথা ব্যথা হওয়া
  • শরীরের জয়েন্ট গুলো ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া
  • পেশী প্রসারণ
  • ওজন কমে যাওয়া
  • গলা শুকিয়ে যাওয়া
  • শুকনো কাশি
  • বমি বমি ভাব হওয়া
  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা
  • ঘুমানোর সময় ঘাম হওয়া

ক্লান্তি ভাব - কোন ব্যক্তিকে যদি এইচআইভি ভাইরাসে আক্রমণ করে তাহলে সে সবসময় অনুভব করে ক্লান্তি ভাব। এ ছাড়া অল্প একটু কাজ করলেই ক্লান্ত হয়ে পড়া প্রাথমিক লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি।

মাথা ব্যথা হওয়া - যদি সবসময় আপনার মাথাব্যথা থাকে। ডাক্তার দেখানোর পরও মাথাব্যথা না কমে তাহলে আপনাকে মনে করতে হবে এটি এইচআইভি ভাইরাসের আক্রমণের ফলে হয়েছে অর্থাৎ এইডস রোগের অন্যতম একটি লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

শরীরের জয়েন্ট গুলো ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া - অনেক সময় বৃদ্ধ বয়সে শরীরের জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হতে পারে কিন্তু কারো যদি এইডস রোগ হয় তাহলে অনেক সময় শরীরের জয়েন্টগুলোতে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আরো পড়ুনঃ আপন নামের অর্থ কি

পেশী প্রসারণ - অনেক সময় ভারী কাজ অথবা দীর্ঘদিন ধরে পরিশ্রম করলে পেশী ব্যাথা হতে পারে কিন্তু কোন ধরনের কাজ ছাড়াই যদি আপনার শরীরের পেশী গুলো ব্যথা হয় তাহলে এটিকে এইডস রোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ওজন কমে যাওয়া - এইচআইভি ভাইরাস আক্রমণ করলে মানুষের শরীরের ওজন ধীরে ধীরে কমতে থাকে। যদি আপনার ওজন দিন দিন কমের দিকে হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা অর্থাৎ এইচআইভি পরীক্ষা করতে হবে।

গলা শুকিয়ে যাওয়া - প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার পরে যদি গলা শুকিয়ে যায় তাহলে এইচআইভি ভাইরাসের আক্রমণের অন্যতম একটি লক্ষণ হিসেবে, বিবেচনা করা হয়।

শুকনো কাশি - এইডস রোগের অন্যতম একটি লক্ষণ হল শুকনো কাশি হওয়া। অনেক সময় শুকনো কাশির সাথে রক্ত বের হতে পারে। সব সময় মুখব্যথা এবং শুকনো কাশি হওয়া এইচআইভি ভাইরাসে আক্রমণের অন্যতম একটি লক্ষণ।

বমি বমি ভাব হওয়া - সব সময় বমি বমি ভাব হওয়া অনেক সময় অল্পতে বমি করে ফেলা এইচআইভি ভাইরাস আক্রমণের অন্যতম একটি লক্ষণ।

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা - কোনো কারণ ছাড়াই কারণে দুশ্চিন্তা করা কান্নাকাটি করা এবং সব সময় মন খারাপ থাকা এইচআইভি ভাইরাস আক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। তাই এটিকে এইডস রোগের একটি লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে।

ঘুমানোর সময় ঘাম হওয়া - যদি কেউ ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণে ঘামে অথবা সব সময় ঘুমের মধ্যে ঘামতে থাকে তাহলে এটি এইডস রোগের একটি লক্ষণ।

এইডস রোগের চিকিৎসা

বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় এখনো এইডস রোগের তুলনা অত্যন্ত কম কিন্তু ধীরে ধীরে বাংলাদেশে এইডস রুগীর পরিমাণ বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে এইডস আক্রান্ত সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.১ শতাংশ। এইডস রোগের চিকিৎসা জানব এখন।

কেউ যদি এইডস রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে সে অনেক মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। তাই প্রথমে রোগীকে মানসিকভাবে তৈরি করাটাই আসল চিকিৎসা। কারণ যেহেতু এইডস রোগের এখন পর্যন্ত কোন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি নেই তাই রোগী মানসিক ভাবে আসা হারিয়ে ফেলে।

তাই রোগীকে প্রথমে মানসিকভাবে তৈরি করতে হবে তার পাশাপাশি পরিবার ও স্বজনদের সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পরিবার যদি রোগীকে সাহায্য না করে তাহলে একজন রোগী কখনোই এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। কারণ এই রোগের প্রধান সমস্যা হলো সামাজিক বাধা।

এইডস রোগ থেকে মুক্তির উপায়

এইডস রোগ কেন হয়? এর কারণ জানার পর এইডস রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। যদিও এখন পর্যন্ত এ রোগের চিকিৎসা তৈরি হয়নি। তাই প্রথম থেকে আমাদেরকে এইডস রোগ থেকে মুক্তির উপায় গুলো জেনে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

১। সাধারণত এইচআইভি ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে অসচেতনতা এর কারণে। ঝুঁকির মাজার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান এবং ধারণা না থাকার কারণে এইচআইভি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তাই প্রথমে মানুষকে এইচআইভি ভাইরাস এবং এ ভাইরাসের কারণে এইডস সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে।

২। নিরাপদ যৌন মিলনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। একজন মানুষ যখন নিরাপদ যৌন মিলন করবে তখন সে এইচআইভি সংক্রমণ থেকে নিজেকে এবং তার সঙ্গীকে মুক্ত করতে পারবে। যৌন মিলনের সময় কনডম ব্যবহার করা এছাড়া আরো কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করতে হবে।

৩। শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগস বা নেশাদ্রব্য জাতীয় কোন জিনিস গ্রহণ না করা। অনেক সময় এ সকল কারণে এইচআইভি ভাইরাস মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়ে থাকে।

৪। একবার মানুষের ব্যবহার করা সুচ বা সিরিঞ্জ দ্বিতীয়বার ব্যবহার না করা। যদি এমনটা কেউ করে তাহলে অবশ্যই নিজেকে সতর্ক থাকতে হবে।

৫। অন্যের দাড়ি অথবা চুল কাটা ব্লেড নিজের শরীরে না লাগানো। এ সকল কারণে অনেক সময় এইচআইভি ভাইরাস আমাদের শরীরে প্রবেশ করে ফেলে।

৬। যৌন রোগ বা প্রজননতন্ত্র সংক্রমন থাকলে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কারো যদি যৌন রোগ অথবা প্রজননতন্ত্র সংক্রমণ থাকলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

৭। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। এর জন্য অবশ্যই প্রচার মাধ্যম এর সাহায্য নিতে হবে। যারা এই রোগ সম্পর্কে জানে না সাধারণত তাদেরকে প্রচারের মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাস এবং এইডস সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে।

আমাদের শেষ কথাঃ এইডস রোগ কেন হয় - এইডস রোগের লক্ষণগুলো কি কি

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে এইডস রোগ থেকে মুক্তির উপায়, এইডস রোগের চিকিৎসা, এইডস রোগের উপসর্গ গুলো কি? এইডস রোগের লক্ষণগুলো কি কি? এইডস রোগ কেন হয়? এর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন।

আরো পড়ুনঃ লটকন ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আপনি যদি এই সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়লে আশা করি উক্ত বিষয়ে আর কোন ধরনের সমস্যা থাকবে না। ২০৭৯১

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url